দিনহাটায় তৃণমূল নেতার দ্বারা চাকরির প্রতারণা ও ধর্ষণ: মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায়?
দিনহাটায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে চাকরির প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগ। বিস্তারিত পড়ুন।

দিনহাটার বড় আঠিয়াবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে এক মহিলাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার চাকরি দেওয়ার নাম করে ৫ লক্ষ টাকা নেওয়া এবং পরবর্তীতে তাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং সমাজে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ঘটনা বিবরণ
অভিযোগ অনুযায়ী, আব্দুল মান্নান ওই মহিলার বাবার কাছ থেকে তার মেয়েকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকার চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫ লক্ষ টাকা নেন। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও চাকরি না হওয়ায় পরিবারটি টাকা ফেরত চাইলে মান্নান টালবাহানা শুরু করেন। ১৪ মার্চ, মান্নান ওই মহিলাকে ইন্টারভিউয়ের নাম করে একটি ফাঁকা বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। এরপর, মান্নান মহিলার নগ্ন ছবি ও ভিডিও তুলে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেন এবং হুমকি দেন যে, যদি টাকা ফেরত চাওয়া হয়, তবে এই ছবি ও ভিডিও তার স্বামীকে পাঠানো হবে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হবে। এছাড়াও, মান্নান মহিলাকে মদ্যপান করতে বাধ্য করেন, এবং রাজি না হলে বোতল দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন।
পুলিশি পদক্ষেপ
ঘটনার পর, মহিলাটি এবং তার বাবা দিনহাটা মহিলা থানায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে, পুলিশ মান্নানকে গ্রেফতার করে, কিন্তু রাতে তিনি থানার থেকে পালিয়ে যান। পরে, তিনি আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশ সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার প্রকাশের পর, তৃণমূল কংগ্রেস আব্দুল মান্নানকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করেছে। কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক জানিয়েছেন যে, যদি মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে তিনি পুনরায় দলে ফিরতে পারেন।
সমাজের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা স্থানীয় সমাজে ক্ষোভ ও উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। লোকেরা বলছেন যে, এমন ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। বিরোধী দলগুলিও এই ঘটনার নিন্দা করেছে এবং রাজ্য সরকারের কাছে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
পূর্ববর্তী অনুরূপ ঘটনা
এই সরকারের সময়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কোচবিহারের দিনহাটায় বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে, যেখানে তিনজন বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হন এবং একজন আহত হন। বিজেপির অভিযোগ ছিল যে, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছিল। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
এছাড়াও, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে বনগাঁয় বিজেপি কর্মী বরুণ বিশ্বাসকে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কাউন্সিলর পাপাই রাহা ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, বিজেপি করার কারণে বরুণ বিশ্বাসকে মারধর করা হয়। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
উপসংহার
দিনহাটার এই ঘটনা সমাজে বিদ্যমান দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়কে প্রকাশ করে। এটি প্রয়োজন যে, এই ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় যাতে সমাজে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং জনগণের বিচার ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস বজায় থাকে।
What's Your Reaction?






