সম্মানের দামে উপহার: সম্ভাজি নগরের গয়নার দোকানে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক ঘটনার সাক্ষী
মানবিক ম্যানেজার
0 votes
সম্মানের দামে উপহার: সম্ভাজি নগরের গয়নার দোকানে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এক ঘটনার সাক্ষী
মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের সম্ভাজি নগর এলাকার একটি গয়নার দোকানে একদিন হাজির হন এক সাধারণ চেহারার বৃদ্ধ দম্পতি। স্ত্রীকে কিছু উপহার দিতে চান স্বামী। জীবনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি পয়সা জমিয়ে এনেছেন তিনি। উদ্দেশ্য একটাই—প্রিয় স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটানো।
গয়নার শোরুমের ম্যানেজার বিষয়টি টের পান। তিনি এগিয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে গল্প শুরু করেন। কথার ফাঁকে ফাঁকে জানতে পারেন তাঁদের জীবনের গল্প, সংগ্রাম, ভালোবাসা আর আত্মসম্মানের কথা।
অবশেষে কেনাকাটার পালা। বৃদ্ধ তাঁর সঙ্গে আনা ঝোলা ব্যাগ খুলে একে একে বের করেন ৫০০ টাকার একটি নোট, তারপর ১০ টাকার, ২০ টাকার একাধিক নোট। শেষে বের হয় এক বোঁচকা খুচরো পয়সা।
ম্যানেজার সব বুঝে ফেলেন। তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে যান। তিনি নিজেই তাঁদের একটি সোনার হার এবং একজোড়া কানের দুল উপহার দেন। শুধু তাই নয়, তিনি বৃদ্ধকে অনুরোধ করেন, যেন নিজ হাতে সেই উপহারটি স্ত্রীকে পরিয়ে দেন।
এক অসাধারণ মুহূর্ত। কিন্তু এত বড় দোকানে এসে বিনামূল্যে কিছু নেওয়াটা বৃদ্ধের আত্মসম্মানে লাগে। জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা তাঁকে শিখিয়েছে—সম্মান সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাই তিনি জোর করে হলেও কিছু টাকা দিতে চান।
ম্যানেজার বহু বুঝিয়েও ব্যর্থ হন। অবশেষে দুই দশ টাকার নোট গ্রহণ করেন, শুধুমাত্র বৃদ্ধের সম্মান বজায় রাখতেই।
সেই মুহূর্তে বৃদ্ধের চোখে জল। ধুতির খুঁট দিয়ে চোখ মুছলেন তিনি। তাঁর স্ত্রীর চোখও জলে ভরে যায়। ভিডিওতেই ধরা পড়ে সেই আবেগঘন দৃশ্য। উপহার পেয়ে তাঁরা যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না। এমন এক মূল্যবান দিন তাঁদের জীবনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এই কাহিনিটি শুধু উপহারের কথা বলে না, বলে আত্মসম্মান, ভালোবাসা ও মানবিকতার কথাও। দোকানের ম্যানেজার বলেন, ‘‘আপনার আশীর্বাদ থাকলেই হবে। পান্ডুরঙ্গ আছেন, কিছুই কম হবে না।’’
কী শিক্ষা পাওয়া যায় এই ঘটনা থেকে?
আত্মসম্মান বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় ভরসা।
ভালোবাসার জন্য মানুষের ত্যাগ কতটা গভীর হতে পারে।
মানবিকতা এখনও বেঁচে আছে সমাজে।
ছোট কাজে বড় আবেগ লুকিয়ে থাকে।
উপহার শুধু দাম দিয়ে হয় না, হৃদয় দিয়ে হয়।
কিভাবে এইরকম ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় বা সমাধান করা যায়?
সমাজে গরীব ও বৃদ্ধদের জন্য সম্মানজনক সহায়তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
দোকান, বাজার, ও পাবলিক প্লেসে মানবিকতা বজায় রাখার জন্য কর্মীদের ট্রেনিং দেওয়া উচিত।
যাঁরা অভাবী, তাঁদের যেন অপমান না করা হয়, এমন মনোভাব প্রচার করতে হবে।
সামাজিক সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতা বাড়াতে স্কুল থেকে শিক্ষা শুরু করা জরুরি।
প্রতিটি ব্যবসায়ী যেন ব্যবসার পাশাপাশি মানবিকতার চর্চা করেন, তা উৎসাহিত করা দরকার।
Files
What's Your Reaction?






