ভয়েজার ১: মহাকাশে মানবতার শেষ বার্তা কি?
ভয়েজার ১ পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দূরে পাঠানো মহাকাশযান। এটি এখন ইন্টারস্টেলার স্পেসে আমাদের পক্ষ থেকে একটি বার্তা নিয়ে চলছে — সোনালী ডিস্কে মানব সভ্যতার সেরা মুহূর্তগুলি। জানুন এর অসাধারণ সফরের গল্প।

? ভয়েজার ১: মানবজাতির দূরতম বার্তাবাহক
১৯৭৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর, নাসা পৃথিবী থেকে একটি ছোট্ট মহাকাশযান পাঠিয়েছিল, যার নাম ছিল Voyager 1। তখন হয়তো কেউ ভাবেনি, এই ছোট্ট যন্ত্রটি একদিন পৃথিবী থেকে ২৫ বিলিয়নের বেশি কিলোমিটার দূরে চলে যাবে এবং হয়ে উঠবে মানবজাতির সবচেয়ে দূরবর্তী দূত।
? প্রথম মিশন: বৃহস্পতি ও শনি অভিযানের অসাধারণ সাফল্য
ভয়েজার ১-এর মূল কাজ ছিল বৃহস্পতি (Jupiter) এবং শনি (Saturn) গ্রহের কাছ থেকে ছবি ও বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা। এটি সফলভাবে পৃথিবীতে ফেরত পাঠিয়েছিল:
-
বৃহস্পতির চাঁদ আইও (Io)-তে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির ছবি, যা ছিল প্রথমবারের মতো।
-
শনির চাঁদ টাইটান (Titan)-এর ঘন বায়ুমণ্ডলের চমকপ্রদ বিশ্লেষণ।
-
শনির বলয় ও চাঁদগুলির অসাধারণ ছবিগুলো।
? ইন্টারস্টেলার স্পেসে প্রবেশ: সূর্যজগত ছেড়ে অজানার পথে
২০১২ সালে, ভয়েজার ১ সৌরজগতের প্রান্ত ছাড়িয়ে ইন্টারস্টেলার স্পেসে প্রবেশ করে — অর্থাৎ সেই এলাকা, যেখানে আর সূর্যের প্রভাব কার্যকর নয়। এটি একমাত্র মহাকাশযান, যা প্রকৃত অর্থে অন্য তারা ও গ্যালাক্সির মাঝে প্রবেশ করেছে।
? শক্তির উৎস: RTG (Radioisotope Thermoelectric Generator)
এই দূরত্বে সৌর প্যানেল কাজ করে না, তাই ভয়েজার ১-এ প্লুটোনিয়াম-২৩৮ ব্যবহার করে তৈরি করা RTG লাগানো হয়েছে। এটি তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, এবং আজ প্রায় ৪৮ বছর পরেও কিছু যন্ত্র চালু আছে। তবে শক্তি কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে যন্ত্রগুলি বন্ধ করা হচ্ছে।
? গোল্ডেন রেকর্ড: ভিনগ্রহীদের জন্য মানবতার বার্তা
ভয়েজার ১-এর বিশেষ আকর্ষণ হলো একটি ২৪-ক্যারেট সোনার রেকর্ড। এতে রয়েছে:
-
৫৫টি ভাষায় “স্বাগতম” বার্তা
-
শিশুর কান্না, হাতির ডাক, সমুদ্রের শব্দ
-
বাখ, মোজার্ট, বিটলসসহ সঙ্গীত
-
মানুষ, প্রাণী, প্রকৃতি, শহরের ছবি
-
মানচিত্র ও বিজ্ঞান ভিত্তিক পৃথিবীর অবস্থান
উদ্দেশ্য: যদি কোনও এলিয়েন সভ্যতা এটি খুঁজে পায়, তাহলে তারা বুঝতে পারবে আমরা কারা।
?️ প্রযুক্তিগত সমস্যা ও সমাধান
থ্রাস্টার সমস্যা:
২০২৩ সালে থ্রাস্টার গুলোর সংকেত পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। নাসার বিজ্ঞানীরা বিকল্প পদ্ধতিতে পুরোনো থ্রাস্টার চালু করেন, যা ছিল এক বিশাল সাফল্য।
যোগাযোগ:
বর্তমানে Voyager 1 থেকে পৃথিবীতে একটি সিগন্যাল আসতে ২২ ঘণ্টা সময় লাগে! এত দূরত্বেও Deep Space Network-এর মাধ্যমে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
? ভয়েজার ১ যা শিখিয়েছে
-
বৃহস্পতির চাঁদ Io-তে আগ্নেয়গিরি ছিল প্রথমবারের আবিষ্কার।
-
শনির বলয়ে থাকা ডিভিশন, অদৃশ্য উপগ্রহের প্রভাব বোঝা গেছে।
-
ইন্টারস্টেলার স্পেসে কসমিক রেডিয়েশন ও প্লাজমা তরঙ্গের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
⏳ ভবিষ্যতের দিক
ভয়েজার ১ সম্ভবত ২০৩০ সাল পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে। এরপর এটি চিরতরে নিরব হয়ে যাবে, কিন্তু এর ভেতরে থাকা গোল্ডেন রেকর্ড বহন করে চলবে বহু মিলিয়ন বছর, মহাবিশ্বে ভেসে বেড়াবে মানবতার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে।
? কিছু অতিরিক্ত তথ্য:
বিষয় | তথ্য |
---|---|
মহাকাশে দূরত্ব | ২৫+ বিলিয়ন কিমি |
ইন্টারস্টেলার প্রবেশ | ২০১২ |
শক্তির উৎস | RTG (Plutonium-238) |
যোগাযোগ সময় | প্রায় ২২ ঘণ্টা |
বার্তা ভাষা | ৫৫টি ভাষা |
পাঠানো সংগীত | ২৭টি গান |
? উপসংহার: এক অমর বার্তা
ভয়েজার ১ আমাদের বলে — "আমরা ক্ষুদ্র, কিন্তু কৌতূহলী। আমরা সীমা মানি না।"
এটি শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি মানবজাতির সাহস, বিজ্ঞান, এবং সৌন্দর্যের প্রতীক। হয়তো একদিন কোনো দূর গ্রহের প্রাণী একে খুঁজে পাবে এবং আমাদের সম্পর্কে জানবে।
? আপনাদের প্রতি আহ্বান:
ভয়েজার ১-এর মতো আরও বিস্ময়কর বিজ্ঞান, মহাকাশ এবং প্রযুক্তির খবর পেতে আমাদের নিউজ সাইট NewsHobe.com প্রতিদিন ভিজিট করুন।
কমেন্টে জানান আপনি এমন আরও কী জানতে চান, এবং পোস্টটি শেয়ার করে বিজ্ঞানপ্রেমীদের সাথে ছড়িয়ে দিন।
লিখেছেন: চন্দন ঘোষ
(NewsHobe স্পেশাল রিপোর্ট)
What's Your Reaction?






